জার্মানিতে টাকা খরচ না করে আসতে চাইলে এবং ওয়েটিং পিরিয়ডের ঝামেলা এড়াতে চাইলে, সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো DAAD Scholarship সিকিউর করা। আপনাদের মধ্যে অনেকেরই এই স্কলারশিপটি পাওয়ার যোগ্যতা থাকলেও, শুধুমাত্র এ সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকেই এটি পান না। অনেকের ধারণা, DAAD Scholarship পেতে হলে জার্মান ভাষা জানতে হবে, যা সম্পূর্ণ ভুল। শুধুমাত্র তখনই জার্মান ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন হবে যখন আপনি যে প্রোগ্রামে পড়তে আসবেন, সেটি জার্মান ভাষায় পড়ানো হয়।
কয়েকদিন আগেই আমি আমার ডিএএডি স্কলারশিপ পাওয়ার গল্প এবং কীভাবে আপনারা এটি পেতে পারেন, সেই বিষয়ে লেখা আমার ব্লগটি শেয়ার করেছিলাম। আমার জার্নির কথা জেনে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আমি লেখাটি সহজ ও বোধগম্য করে লিখেছিলাম, যাতে সবাই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর থেকে অনেকেই আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে নক করেছেন। আপনাদের DAAD Scholarship নিয়ে এত আগ্রহ দেখে আমি একই সাথে বিমোহিত এবং আশাহত। বিমোহিত কারণ, অনেকের প্রশ্ন দেখে মনে হয়েছে, আমি আরও কিছু বিষয় সহজভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতাম। আশাহত কারণ, অনেকেই আমার সম্পূর্ণ লেখাটি না পড়েই, সেই লেখাতেই সমাধান করা বিষয়গুলো নিয়ে আবারও প্রশ্ন করেছেন। যদিও এটি দোষের কিছু নয়। লেখাটি আসলেই দীর্ঘ ছিল।
আপনাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, এ লেখাটিও দীর্ঘ হবে। আমি দুঃখিত। তবে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়লে আশা করি, DAAD Scholarship নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। এর অধিকাংশ প্রশ্ন আমি সরাসরি পাঠানো মেসেজ থেকে নিয়েছি, আর বাকি কিছু অংশ আমি নিজেই সংযুক্ত করেছি।
১. ডিএএডি স্কলারশিপে কিভাবে আবেদন করবো?
উত্তর: ডিএএডি স্কলারশিপের আবেদন অন্যান্য স্কলারশিপের মতো নয় যে, নির্দিষ্ট কোনো ওয়েবসাইটে গিয়ে ডকুমেন্টস আপলোড করলেই আবেদন সম্পন্ন হবে। বরং, ডিএএডিতে বিভিন্ন স্কিমের আওতায় বিভিন্ন বিষয়/সাবজেক্ট/প্রোগ্রামে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সব স্কিম সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে https://www2.daad.de/deutschland/stipendium/datenbank/en/21148-scholarship-database/ ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে হবে। আপনি যদি সত্যিই আগ্রহী হন, তবে অন্তত একবার এ ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা উচিত।
তবে, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ স্কলারশিপ EPOS স্কিমের আওতায় হয়ে থাকে। এই স্কিমের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য ফান্ড দেওয়া হয়। তাই, যদি আপনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে না চান, তবে সরাসরি https://www2.daad.de/deutschland/stipendium/datenbank/en/21148-scholarship-database/?status=&origin=&subjectGrps=&daad=&intention=&q=epos&page=1&detail=50076777 লিংকে গিয়ে EPOS-এর সাবজেক্টগুলো জেনে নিতে পারেন। তবে সত্যি বলতে, স্কলারশিপ পেতে হলে কিছুটা পরিশ্রম করতেই হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
উপরের লিংকে গেলে দেখবেন যে, EPOS-এর অধীনে যেসব পোস্টগ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স/পিএইচডি) সাবজেক্টে ফান্ড দেওয়া হয়, তার একটি তালিকা দেওয়া আছে। তালিকায় ক্লিক করলে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড হবে। সেই পিডিএফে সব সাবজেক্টের নাম উল্লেখ করা রয়েছে, যেগুলোতে আপনি আবেদন করতে পারবেন। এর মধ্যে কোনো সাবজেক্ট যদি আপনার শিক্ষাগত পটভূমির সাথে মিল থাকে, তাহলে আপনার প্রথম কাজ হবে সেই সাবজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। সাবজেক্টের নামের উপর ক্লিক করলে সাধারণত সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের একটি পেইজ লোড হবে, যেখানে সাবজেক্টটি এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন। আবেদন প্রক্রিয়া সাবজেক্ট অনুসারে ভিন্ন হতে পারে- কোথাও নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ডকুমেন্টস আপলোড করতে হয়, কোথাও ডাকযোগে পাঠাতে হয়, আবার কোথাও নির্দিষ্ট ইমেইলে পাঠাতে হয়। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ডকুমেন্টস পাঠালে আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
যদি EPOS-এর অধীনে আপনার সাথে মানানসই কোনো সাবজেক্ট না পাওয়া যায়, তবে অন্যান্য স্কিমগুলো দেখা উচিত।
(এরপরের আলোচনায় আমি DAAD Scholarship বলতে আমি মূলত DAAD EPOS Scholarship কে বুঝাবো।)
২. DAAD Scholarship এর জন্য আবেদনে কত টাকা খরচ হয়?
উত্তর: DAAD Scholarship-এর জন্য আবেদন করতে কোনো টাকা খরচ হয় না। তবে, আবেদন করার জন্য যদি আপনাকে জার্মানিতে ডকুমেন্ট পাঠাতে হয়, তাহলে সে বাবদ কিছু খরচ হতে পারে।
৩. আমি মাত্র এইচএসসি শেষ করেছি, আমি কি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: না। ডিএএডি বাংলাদেশ থেকে শুধুমাত্র মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য স্কলারশিপের আবেদন গ্রহণ করে।
৪. আমি ডিপ্লোমা করেছি। আমি কি DAAD Scholarship এর জন্য আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: ডিএএডি স্কলারশিপের অন্যতম প্রধান যোগ্যতা হলো সাধারণত চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি। সেই শর্ত অনুযায়ী আপনি আবেদন করতে পারবেন না।
৫. আমার ব্যাচেলর ৩ বছরের, আমি কি আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: আপনি আবেদন করার যোগ্য কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সরাসরি প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করা উচিত। সাধারণত সাবজেক্টের বিস্তারিত বিবরণের মধ্যেই কো-অর্ডিনেটর বা কন্টাক্ট পার্সনের ইমেইল দেওয়া থাকে।
৬. ডিএএডি স্কলারশিপে কখন আবেদন করা যাবে?
উত্তর: প্রতিটি সাবজেক্টের আলাদা আলাদা ডেডলাইন রয়েছে। আপনাকে নির্ধারিত ডেডলাইনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
৭. ডিএএডি স্কলারশিপের জন্য কেমন রেজাল্ট থাকা উচিত?
উত্তর: এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কোনো মানদণ্ড উল্লেখ নেই। তবে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর রেজাল্ট তার ব্যাচের মধ্যে শীর্ষ এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে থাকতে হবে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ভালো রেজাল্টের কারণে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। অনেকেই ৪ স্কেলের মধ্যে ৩ সিজিপিএ নিয়েও স্কলারশিপ সিকিউর করেছেন। তাই রেজাল্ট যদি কিছুটা কম হয়, তবে অন্য যোগ্যতাগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে সামগ্রিকভাবে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করা উচিত।
৮. আমি এখন জার্মানিতেই আছি। আমি কি আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: আপনি যদি জার্মানিতে ১৫ মাসের কম সময় ধরে অবস্থান করে থাকেন (আবেদনের সর্বশেষ তারিখে) এবং অন্যান্য যোগ্যতা পূরণ করেন, তাহলে আবেদন করতে পারবেন।
৯. ডিএএডি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে কেমন ভাষাগত দক্ষতা দরকার?
উত্তর: অধিকাংশ মাস্টার্স কোর্স ইংরেজিতে পড়ানো হয়। সেক্ষেত্রে IELTS-এর জন্য মিনিমাম স্কোর ৬ এবং TOEFL-এর ক্ষেত্রে মিনিমাম স্কোর হলো ৫৫০ (পেপার বেইসড), ২১৩ (কম্পিউটার বেইসড) অথবা ৮০ (ইন্টারনেট বেইসড)। তবে, আপনি চাইলে Medium of Instruction (MOI) দিয়ে আবেদন করতে পারেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয় এটি অনুমোদন করে। তবে, ভিসা আবেদন করার আগে সাধারণত আপনাকে IELTS দিতে হতে পারে। আর যদি আপনার প্রোগ্রামটি জার্মান ভাষায় পড়ানো হয়, তাহলে অন্তত B1 লেভেলের জার্মান ভাষা দক্ষতা প্রয়োজন হবে (স্পেসিফিক সঠিক তথ্যের জন্য প্রোগ্রামের বিবরণে দেখে নিতে হবে)।
১০. লিস্ট থেকে দেখে মনে হলো অন্তত দুইটি সাবজেক্ট আমার ব্যাচেলরের সাথে মিলে। একই সময়ে আমি কতটি সাবজেক্টের জন্য স্কলারশিপের আবেদন করতে পারব?
উত্তর: আপনি সর্বোচ্চ তিনটি সাবজেক্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যদি একাধিক কোর্সের জন্য আবেদন করেন, তাহলে DAAD আবেদন ফর্মে কোর্সগুলোর অগ্রাধিকারের ক্রম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত করতে হবে। তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন, যদি আপনি একাধিক (সর্বোচ্চ ৩টি) সাবজেক্টের জন্য আবেদন করেন, তাহলেও আপনাকে মাত্র একটি মোটিভেশন লেটার জমা দিতে হবে। সেই লেটারে আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে কেন আপনি এই নির্দিষ্ট কোর্সগুলোর জন্য আবেদন করছেন এবং কেন এই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছেন।
১১. ডিএএডি স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কি কোনো বয়সসীমা আছে?
উত্তর: না। তবে, আবেদন করতে হবে সর্বশেষ একাডেমিক ডিগ্রি সম্পন্ন করার ছয় বছরের মধ্যে।
১২. ডিএএডি স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কি কোনো পরীক্ষা দিতে হবে?
উত্তর: না। আপনাকে শুধু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস রেডি করে পাঠাতে হবে। তবে মনে রাখবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইমারি সিলেকশন শেষে আপনার একটি ইন্টারভিউ নিতে পারে। তবে এটি নিয়ে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
১৩. আমি 'অমুক' বিষয়ে ব্যাচেলর করেছি। আমি কি DAAD Scholarship এর জন্য আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: DAAD Scholarship-এর যে সাবজেক্ট লিস্টটি দেওয়া থাকে, খেয়াল করলে দেখবেন প্রতিটি সাবজেক্টই একাধিক প্রায়োগিক বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। বাংলাদেশে আপনার ব্যাচেলরে পড়া অধিকাংশ সাবজেক্ট সরাসরি ১০০% মিলে যাবে না। এখন আপনি যদি DAAD পেতে চান, তবে আপনার ব্যাচেলর বা কাজের অভিজ্ঞতার সাথে সবচেয়ে মিল থাকা সাবজেক্টটি আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে।
উদাহরণ দিয়ে বলি, আমি বর্তমানে "Landscape Ecology and Nature Conservation" নিয়ে জার্মানিতে পড়ছি। আমার ব্যাচেলর ছিল জুলজি (Zoology) নিয়ে, আর দেশে থাকতে আমি অ্যাকুয়াটিক ইকোলজি (Aquatic Ecology)-এর উপর কাজ করেছি। আবার মাহিন ভাই আর্কিটেকচার নিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তিনিও এই সাবজেক্টে পড়তে এসেছেন, কারণ আর্কিটেকচারের কিছু পার্স্ফেক্টিভের সাথেও এই সাবজেক্টের মিল আছে। আমার সাবজেক্টে প্রতিবছর নেপাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থী আসেন, যাদের বেশিরভাগেরই ব্যাকগ্রাউন্ড ফরেস্ট্রি (Forestry)। এবার কলম্বিয়া থেকে দুইজন এসেছেন- একজন বায়োলজি (Biology), আরেকজন মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology) ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে।
সুতরাং, আপনার কাজ হলো- আপনার সাথে মিলে এমন সাবজেক্টে কী কী রিকোয়ারমেন্ট আছে তা ভালোভাবে চেক করা। যদি দেখেন আপনি রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করছেন, তাহলে আবেদন করতে কোনো বাঁধা নেই। এমনকি যদি কোনো সাবজেক্টে পড়ার ইচ্ছা থাকে এবং সেটি আপনার ব্যাচেলরের সাথে পুরোপুরি না মিলে (আংশিক মিলে), তবে যদি কাজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যায়, তাহলেও ক্ষেত্র বিশেষে আপনি আবেদন করতে পারেন। প্রয়োজনে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করে জানতে পারেন আপনি আবেদন করার যোগ্য কিনা।
১৪. আমার চাকরির অভিজ্ঞতা মূলত এক বছরের। আমি কি আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: DAAD Scholarship-এ আবেদন করতে হলে সাধারণত ব্যাচেলর বা সর্বশেষ ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর অন্তত ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। তবে যদি আপনার অভিজ্ঞতা সামান্য কম হয়, তবে যেই সাবজেক্টে আবেদন করতে চান, তার কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করে জেনে নিতে পারেন আপনি আবেদন করার জন্য যোগ্য কিনা।
১৫. আমি পড়াশোনা করেছি 'অমুক' সময়ে, স্টাডি গ্যাপ এতো বছর। আমি কি আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: DAAD Scholarship-এর শর্ত অনুযায়ী, সর্বশেষ একাডেমিক ডিগ্রি সম্পন্ন করার ছয় বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। যদি আপনার পড়াশোনা অনেক আগে শেষ হয়ে থাকে, তবে এই শর্ত অনুসারে আপনি আবেদন করার যোগ্য নাও হতে পারেন। তবে, যদি আপনার কাছে গ্যাপ ব্যাখ্যা করার মতো কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে এবং আপনি সত্যিই আবেদন করতে আগ্রহী হন, তাহলে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করে আপনার পরিস্থিতি জানাতে পারেন।
১৬. আমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা ছিল 'অমুক' সালে, কিন্তু সেশন জট বা অন্যান্য কারণে শেষ হয়েছে 'অমুক' সময়ে। এখন কোন বছর থেকে ছয় বছর হিসাব করবো?
উত্তর: সেশনজট বা অন্য কোনো কারণেই হোক না কেন, আপনার পড়াশোনা যে বছর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে, সেই বছর থেকে ছয় বছর হিসাব করবেন।
১৭. আমার পড়াশোনার সময় দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি কি এটি দেখাতে পারবো?
উত্তর: যেকোনো প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতা আপনি আপনার সিভিতে উল্লেখ করতে পারেন। এটি অবশ্যই আপনাকে প্লাস পয়েন্ট দেবে। তবে, DAAD-এর শর্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর হতে হবে। তাই পড়াশোনার সময়ের অভিজ্ঞতা রিকোয়ারমেন্ট পূরণে গণ্য হবে না।
১৮. আমার ব্যাচেলরের পর 'অমুক' সময় পর্যন্ত ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা আছে। আমি কি এটি অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখাতে পারবো?
উত্তর: DAAD Scholarship-এর ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ সম্পর্কিত স্পষ্ট কোনো গাইডলাইন পাওয়া যায়নি। তবে, যদি আপনার ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি থাকে, তবে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরকে ইমেইল করে জেনে নিতে পারেন আপনি আবেদন করার জন্য যোগ্য কিনা।
১৯. আমি ব্যাচেলর শেষ করে মাস্টার্স করেছি। আমি কি DAAD Scholarship-এর জন্য আবার মাস্টার্সের আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: হ্যাঁ। ইতোপূর্বে মাস্টার্স করা থাকলেও আপনি দ্বিতীয় মাস্টার্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। এমনকি যদি প্রথম মাস্টার্সটি প্রাসঙ্গিক হয়, তবে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যেতে পারে। তবে আপনাকে মোটিভেশন লেটারে সুসংগঠিত যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে- কেন এই দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য আপনাকে ফান্ড দেওয়া উচিত, কেন এই নির্দিষ্ট মাস্টার্সে পড়তে আগ্রহী এবং এটি কীভাবে আপনার পূর্ববর্তী মাস্টার্স ডিগ্রির উপর নতুন জ্ঞান বা দক্ষতা যোগ করবে।
২০. আমি ইতোপূর্বে মাস্টার্স করেছি, আমার জন্য মাস্টার্সে আবেদন করা ভালো হবে নাকি পিএইচডিতে আবেদন করা ভালো হবে?
উত্তর: আপনি মাস্টার্সে যাবেন নাকি পিএইচডিতে যাবেন, এটি সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এটি নির্ভর করবে আপনার ডেডিকেশনের উপর। যদি আপনি মনে করেন যে পিএইচডি করার জন্য এই মুহূর্তে প্রস্তুত, তাহলে অবশ্যই আবেদন করতে পারেন।
২১. মাস্টার্স নাকি পিএইচডি- কোনোটাতে প্রতিযোগিতা বেশি হয়?
উত্তর: প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে, যতটুকু জানি, DAAD স্কিমের আওতাধীন দেশগুলোর ক্ষেত্রে কোনো দেশভিত্তিক কোটা নেই। প্রতিযোগিতা হবে নির্দিষ্ট সংখ্যক সীটের বিপরীতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সাথে। এখন আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন কমিটির যদি কোনো বিশেষ অগ্রাধিকার থেকে থাকে, তাহলে সেটি ভিন্ন ব্যাপার। মাস্টার্স এবং পিএইচডি- উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা নির্ভর করে সাবজেক্টের উপর এবং নির্দিষ্ট বছরে কতজন আবেদন করছে তার উপর। সত্যি বলতে, স্কলারশিপ পাওয়া নির্ভর করে মূলত আপনার যোগ্যতা এবং ভাগ্যের উপর। এখানে কৌশল হলো- আপনার যোগ্যতাকে কতটা দক্ষতার সাথে প্রোগ্রামের চাহিদার সাথে মিলিয়ে উপস্থাপন করতে পারেন।
২২. আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'অমুক' বিষয়ে স্নাতক করেছি। আমি কি আবেদন করতে পারবো?
উত্তর: এই প্রশ্নটি আমাকে সবচেয়ে বিস্মিত করেছে। আপনি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন মানেই আপনি যোগ্য। এখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে গ্লোরিফাই বা হীনমন্য করে দেখার কোনো কারণ নেই। আপনি অবশ্যই আবেদন করতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত দেই। আমার কাছে এমন প্রশ্ন দেখলে মনে হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় মনে করেন যে তাদের যোগ্যতা কম বা অন্যরা তাদের কম যোগ্য বলে বিবেচনা করে। কিন্তু সত্যি বলতে, দেশের বাইরে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো- আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা। এবং এমন হতে পারে, যিনি আপনার ডকুমেন্টস ইভালুয়েট করছেন, তিনি হয়তো এই প্রথমবারের মতো নতুন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনছেন এবং উনি এসব নিয়ে গুগল করার প্রয়োজনও বোধ করেন না। সুতরাং, এসব দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।
২৩. DAAD Scholarship পেলে আমি কি Spouse বা বাচ্চা নিয়ে জার্মানি আসতে পারবো?
উত্তর: DAAD আপনার স্পাউস বা বাচ্চার জন্য আলাদা করে স্টাইপেন্ড দেয় যদি তারা জার্মানিতে আপনার সাথে একসাথে থাকা শুরু করে। তবে স্পাউস বা বাচ্চা নিতে হলে আপনাকে সাধারণ ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসার মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এখনো পর্যন্ত জার্মান এম্বেসি DAAD আবেদনকারীদের স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে না। তাই আপনার স্পাউস বা বাচ্চা একসাথে আসতে পারবে কিনা, তা নির্ভর করবে তাদের ভিসা পাওয়ার উপর। আর হ্যাঁ, ক্লাস শুরুর আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে DAAD আপনাকে প্রায় দুই মাস আগে জার্মানি যেতে বলে যাতে আপনি ভাষা কোর্স (Language Course) করতে পারেন। এই ভাষা কোর্স চলাকালীন সময়েও আপনি স্পাউস বা বাচ্চা আনতে পারবেন না। এর পর আনতে হবে।
২৪. আমি DAAD Scholarship পেয়ে গেলে স্পাউস বা বাচ্চা জার্মানিতে আনতে চাইলে কি তাদের জন্য ব্লক মানি দেখাতে হবে?
উত্তর: না। DAAD Scholarship পেলে আপনার স্পাউস বা বাচ্চা আনতে হলে আলাদা করে কোনো ব্লক মানি বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা এ ধরনের কন্ডিশন দেখাতে হবে না।
২৫. DAAD Scholarship নিয়ে জার্মানি গেলে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় কি কোনো জব করতে পারবো?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি পার্ট-টাইম কাজ করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে DAAD-কে জানাতে হবে। এবং যদি আপনার পার্ট-টাইম কাজ থেকে আয় ৫৩৮ ইউরোর বেশি হয়, তাহলে সেই অতিরিক্ত টাকার সমপরিমাণ অর্থ DAAD-এর দেওয়া ভাতার (Stipend) থেকে কেটে নেওয়া হবে। বাকি অর্থ আপনি পাবেন।
২৬. DAAD স্কলারশিপ পাওয়ার পর জার্মানি আসা পর্যন্ত আপনার কত টাকা খরচ হতে পারে?
উত্তর: DAAD স্কলারশিপ পাওয়ার পর জার্মানি আসা পর্যন্ত আপনার কত টাকা খরচ হতে পারে?
DAAD স্কলারশিপ পাওয়ার আগে পাসপোর্ট ও IELTS বা ভাষা দক্ষতা প্রমাণের পরীক্ষার জন্য কিছু টাকাতো খরচ হয়ই। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জার্মানিতে পাঠাতে হতে পারে, যার জন্যেও সামান্য খরচ হতে পারে। তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে, যদি আপনি স্কলারশিপ পেয়ে যান, জার্মানি আসা পর্যন্ত আপনার আর কত টাকা খরচ হতে পারে?
খরচের হিসাব করার আগে, কী কী করতে হবে তা সংক্ষেপে জানিয়ে দিই-
DAAD স্কলারশিপ পেয়ে গেলে, আপনার প্রথম কাজ হবে ভিসার জন্য আবেদন করা। সাধারণত ভিসার জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়, তবে এখন পর্যন্ত যারা DAAD স্কলারশিপ পেয়েছেন, তাদের কাউকে ভিসা ফি দিতে হয়নি।
এরপর আসবে জার্মানি যাওয়ার আগে ব্যাক্তিগত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার বিষয়টি, যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো খরচ নির্ধারণ করা কঠিন।
এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জার্মানিতে যাওয়ার বিমান ভাড়া। DAAD স্কলারশিপের আওতায় জার্মানিতে যাতায়াতের খরচ সংস্থাটিই বহন করে, তবে কিছু বিষয় আপনাদের আরেকটু বুঝা উচিত। কিছু প্রোগ্রামে সরাসরি বিমানের টিকিট দেওয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিমান ভাড়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরো পরিশোধ করা হয়। যেমন, গত বছর বাংলাদেশ থেকে জার্মানির বার্লিনে আসার জন্য আমাকে ১৩৫০ ইউরো দেওয়া হয়েছিল। যদিও আমার এতো খরচ হয়েছে এমন না। কত টাকা দিবে এটি সাধারণত দূরত্ব বিবেচনায় নির্ধারণ করা হয়। এবং এই অর্থ জার্মানিতে আসার আগে পাবেন না। সাধারণত পৌঁছানোর পর কিছুদিনের মধ্যেই এই অর্থ পরিশোধ করা হয়। যেমন, আমার ক্ষেত্রে সাপ্তাহখানেক সময় লেগেছিলো। জার্মানিতে আসার সাপ্তাহ খানেক পরে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল থেকেই এই বিমান ভাড়া ও হাত খরচের টাকা দেয়া হয়েছিলো।
জার্মানি আসা পর্যন্ত আর কোনো খরচ আছে কি?
সাধারণত না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনো খরচ হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু টাকা নিয়ে এসেছিলাম, কারণ DAAD থেকে প্রথম অর্থ কবে পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। আমি আনুমানিক ৭০০-৮০০ ইউরো এনেছিলাম, যদিও বাস্তবে তেমন দরকার হয়নি। তবে হ্যা, ঐ যে এক সাপ্তাহ পর্যন্ত কোন টাকা পাইনি, তখন এ টাকা কাজে এসেছিলো। অনেকের ক্ষেত্রে পনেরদিনও লাগতে পারে। তাই সঙ্গে টাকা আনা ভালো এবং সেভাবেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত
আজকের মতো এতটুকুই। আশা করি আপনাদের অন্য কোন প্রশ্ন বাকী থাকবেনা। আপনারা চাইলে আমার আগের লেখাটিও আবার পড়ে নিতে পারেন। এই লেখাটি দরকার হলে আমি আপডেট করবো সময়ের সাথে সাথে।
সর্বশেষ আপডেট: ০৭ মার্চ, ২০২৫
গ্রাইফসভাল্ট, জার্মানি।

.jpg)
Post a Comment